ঊনত্রিশ
গাড়ির জানলা দিয়ে হঠাত একটা চেনা গলার স্বর পেয়ে চমকে বাইরে ফিরে তাকালাম। “চুল ঠিক করে নাও। লিপস্টিক ঠিক করে নাও। “ অরূপদা। আমি হেঁসে সামনের সিটে গিয়ে বসে সব ঠিক করে নিলাম। ওদের সামনেই আন্ডারআর্মে আর ক্লিভেজে একটু বডি স্প্রে দিয়ে নিলাম। গাড়ির বাইরে এসে দাঁড়াতেই অরূপদা বলল “গেটের ডান দিকে সিগারেটের দোকানে সবুজ শার্ট পরা একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনে গিয়ে দোকানদারকে বলবে মাউথ ফ্রেশনার দিতে। তুমি যাবে আঠারো নম্বর ঘরে।(হুম ফাইনালি আমি সেই ঘরে যাচ্ছি যেখানে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে।) তুমি হাতাহাতির মধ্যে যাবে না। সব কাজ শেষ করে লোকটার সাথে শুয়ে পড়বে। ঘুমানোর ভান করে পড়ে থাকবে। এটা রাখো।“ আমার হাতে একটা মেয়েলি রুমাল আর একটা ক্লোরোফর্ম ভরা শিশি ধরিয়ে দিয়ে বলল “ ব্যাগে রেখে দাও। এ দিয়ে কি করতে হবে সেটা তুমি আমার থেকে ভালো জানো।“ আমি ব্যাগের সাইড পকেটে রুমাল আর ছোট শিশিটা ঢুকিয়ে রাখলাম। অরূপদা বলল “এগিয়ে পড়ো। ওই লোকটাই তোমাকে ইশারায় বুঝিয়ে দেবে যে কোথায় যেতে হবে। উইশ ইউ বেস্ট অফ লাক।“ ওরা পিছনে রয়ে গেল। আমি আমার মাঝারি হিল তোলা জুতোয় খট খট শব্দ করে কোমর দুলিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম ওই দোকানের সামনে। এমন উগ্র সাজ বা পোশাক পরে আসিনি যাতে আমাকে সাধারণ কল গার্লদের মতন মনে হয়। কেউ আমার দিকে ঘুরেই দেখল না। ওদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতেই আমি হ্যান্ড ব্যাগের চেইনটা আস্তে করে খুলে দিলাম। আমি গিয়ে একটা ক্লোরিমিন্ট চাইলাম। সবুজ রঙের লোকটার সাথে চোখা চুখি হল। ও আমাকে এক পাশে সরে আসতে ইশারা করলো। আমি দোকানদারকে বললাম যে একটু পরে এসে নিচ্ছি। ও কাউকে একটা কল করল। একজন বেয়ারা বাইরে বেড়িয়ে এসে গেটের বাইরে দাঁড়ানো দারোয়ান আর ভেতরে দাঁড়ানো সশস্ত্র লোকদের মধ্যে দিয়ে আমাকে ভেতরে নিয়ে চলে গেল। প্রচুর লোক আর সবাই খুব বড়লোক তাতে সন্দেহ নেই। আমার চারপাশ দিয়ে বেশ কয়েকজন লোক চলে গেল। হয়ত ও আমার সাথে আছে বলেই কেউ আমাকে আটকাল না। হোটেলের ইয়া বড় সদর দরজায় পা রাখতে না রাখতেই একটা একুশ-বাইশ বছরের ছেলে হাঁসি মুখে এগিয়ে এলো। “মিসেস রুমি, রাইট?” বললাম “নো মিস্টার, মিস রুমি।“ ও হেঁসে বলল “আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি। এসো।“ বেয়ারা অন্য দিকে চলে গেল। ছেলেটা একটা জিন্স আর একটা টি শার্ট পরে আছে। মনে পড়ে গেল আজকের দুপুরের কথা। ক্লায়েন্ট নিজে এসে না নিয়ে গেলে কেউ ঢুকতে পারে না। এখানেও লোকের ভিড়। তবে পূজার প্যান্ডেলের ভিড় নয়। তবে অনেকেই আমার গা ঘেঁষে চলে যাচ্ছে।
একটু আড়চোখে দেখলাম বেয়ারা আমাদের দিকে তাকাতে তাকাতে চলে যাচ্ছে। এই কি অরূপদার সেই পোষা বেয়ারা? বিশাল হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঢুকে ব্যাপ্তি আর ডেকোরেশন দেখে মাথা ঘুরে যাওয়া স্বাভাবিক। ও আমাকে পথ দেখিয়ে বা দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। দেখলাম সামনে লিফট। কপাল ভালো। লিফটটা ঠিক সেই মুহূর্তে প্রায় দশ জন কে নিয়ে ওপরে উঠে গেল। আমরা লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালাম। লিফট ওপরের দিকে যাচ্ছে। ফার্স্ট ফ্লোরে গিয়ে থামল। ছেলেটা আমাকে হেঁসে বলল “টাফ লাক।“ আমি বললাম “ইট উইল টেক সাম টাইম আই গেস। প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড, নিড তো গো টু দা অয়াশরুম।“ ও হেঁসে বাংলা ইংরেজি মিশিয়ে বলল “নট অ্যাঁট অল। অন্তত পাঁচ মিনিটের কমে আসছে না। দেখে দেখে অভ্যাস হয়ে গেছে। “ লিফটের পাশে একজন হোটেলের লোক দাঁড়িয়ে ছিল, ও লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিল। আমি বললাম “উইল বি রাইট ব্যাক।“ ছেলেটা আমাকে মুখের ইশারায় বলে দিল যে ইট ইস ফাইন। ও বিরক্তির সাথে আবার লিফটের বোতামটা টিপে ধরল। মেয়েদের অয়াশরুমে এসে একটা ক্লোজড জায়গায় গিয়ে ব্যাগটা খুলে ভেতরটা হাতড়ে দেখলাম। সত্যি একটা ছোট ভাঁজ করা কাগজ। গাড়িতে উঠেই একবার ব্যাগের ভিতরটা চেক করেছিলাম, আর গাড়ি থেকে নেমে চেইন খোলার পরও। তখনও ভেতরটা হাতড়ে দেখেছিলাম। না তাতে কোনও কাগজ ছিল না। অর্থাৎ আমার গা ঘেঁষে চলে যাবার সময় কেউ খুব নিপুণ হাতে এটা আমার ব্যাগে ফেলে রেখে দিয়ে গেছে। তাতে লেখা আছে –
“যা হচ্ছে হতে দাও। যেমন চলছে চলতে দাও। ঘরে একাধিক ছেলে থাকার সম্ভাবনা। লড়তে যেও না, বিপদে পড়বে। রুম বয়টি জাঁদরেল। ওর সাথে কোনও কথা বলবে না। সব কিছু হওয়ার পর পরই ঘর থেকে বেড়িয়ে আসবে না। বলবে মাথা ধরেছে। একটু রেস্ট নিতে চাও। ঘর থেকে বের করে দিলে চলে আসবে, নইলে ওখানেই শুয়ে থাকবে। যদি একজন থাকে তো তাকেও উস্কে দেবে তোমার সাথে রেস্ট নিতে। ঘুমিয়ে পড়লেই উঠে পালিয়ে আসবে। আর কিছু করবে না। একের বেশী থাকলে মটকা মেরে পড়ে থাকবে। এক এক জন করে বিদায় নেওয়ার পর ঘরের মালিকের সাথে ওই একই জিনিস করবে। মানে তোমার সাথে রেস্ট নেবার আহ্বান জানাবে। ঘুমিয়ে পড়লেই বেড়িয়ে আসবে। ঘরের দরজায় ইয়েল লক। বাইরে থেকে টানবে না। তাহলে আমরা ঢুকতে পারব না। কোনও ঝামেলা চাই না এখানে। বোয়াল মাছকে হাতে নাতে ধরার সময় এসেছে। চিঠিটা পড়ে ফ্ল্যাশ করে দেবে।“ এটাই মেইন লেখা। তবে চিরকুটের একদম নিচে অন্য হাতের লেখা রয়েছে আর সেটা অন্য কালিতে লেখা। আর লেখক বা লেখিকা যে ভীষণ তাড়াহুড়ায় লিখেছে সেটা দেখলে বোঝা যায়। কোনও অমসৃণ জিনিসের ওপর রেখে লিখেছে কারণ এক জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। লেখা আছে “ব্যাগের ভেতর যে শিশিটা আছে সেটা বের করার চেষ্টাও করো না...বরং অয়াশরুমেই ফেলে রেখে চলে যাও...তোমার সামান্য ভুলে পুরো ব্যাপারটা ভণ্ডুল হয়ে যাবে...তুমি ওয়েল প্রটেক্টেড...অদিতি ভালো আছে...ও আর কিছুক্ষনের মধ্যেই এখানে পৌছাবে।“ পুরো জিনিসটা পড়ে চিঠিটা ফ্লাশ করে দিলাম। কমোডের সিঙ্কটা খুলে তার ভেতর শিশিটা ফেলে দিলাম। না অদিতির ওপর এখন ভরসা না করে আর কোনও উপায় নেই। তবে একটা জিনিস না ভেবে পারলাম না। অরূপদার কথা শুনে মনে হচ্ছে যে একজন লোকই এসেছে। কিন্তু অদিতি আমাকে সাবধান করে দিয়েছিল যে একাধিক লোক থাকতে পারে, আবার এই চিঠিতেও লেখা আছে যে একাধিক লোক থাকতে পারে। তার মানে কি অরূপদা জানে না? না কি জেনে বুঝেও আমাকে সবটা না বলে বিপদের দিকে ঠেলে দিল। না আর ভাবতে পারছি না। দেরী হয়ে যাচ্ছে। এরপর সন্দেহ করতে পারে।
খুব স্বাভাবিক ভাবে হাঁসি মুখে বেড়িয়ে এলাম অয়াশ রুম থেকে। ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে আমার অপেক্ষায়। না লিফট এখনও আসেনি। ওর পাশে এসে দাঁড়ানোর কয়েক সেকন্ডের মধ্যে এসে হাজির হল লিফট। ও ঢুকে এক নম্বর বোতামটা টিপে দিল। লিফটে আরেকজন উঠেছিল আমাদের সাথে, সে কত নম্বর তলার বোতাম টিপেছে সেটা খেয়াল করতে পারলাম না। লিফট থেকে বেড়িয়েই ডান দিকে বিশাল করিডর দিয়ে হেঁটে চললাম ছেলেটার পেছন পেছন। ঘরের নম্বর গুলোর ওপর নজর রাখতে রাখতে চলেছি। ১১৩, ১১৪, ১১৫,১১৬,১১৭, ১১৮। ঘরের সামনে এসে ছেলেটা থেমে গেলো। একটা একটা করে নম্বর দেওয়া ঘরগুলো কে আমি অতিক্রম করছি আর ততই যেন আমার হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বেড়ে চলেছে। না এখন দাঁড়িয়ে আছি ১১৮ র সামনে। ছেলেটা অ্যাক্সেস কার্ড চেপে ধরল একটা কালো জায়গায়, প্রথমে পিইইই করে একটা মৃদু অথচ দীর্ঘ শব্দ হল আর তার পরেই দরজার লকের জায়গায় একটা খট করে মৃদু শব্দ হল। এত টেনশনের মধ্যে আমার ক্লায়েন্টের নামটাই জানা হয় নি এখনও। ছেলেটা দরজায় একটা মৃদু ধাক্কা মেরে দরজাটা খুলে দিয়ে একটা বাও করে আমাকে ইশারা করল আগে ঢুকতে। আমি হেঁসে দরজার মুখ পা রাখতেই ও বলল “আফটার ইউ মাই লেডি।“ আমি একটা ছোট্ট “থ্যাংকস” জানিয়ে নরকে পদার্পণ করলাম। ছেলেটাও আমার ঠিক গা ঘেঁষেই ভেতরে প্রবেশ করল। আক্সেস কিটা একটা খোপে চেপে দিতেই সারা ঘরটা উজ্জ্বল হলুদ আলোয় ভরে গেল। একটা ভারী ঘররর মতন শব্দ শুরু হল, বুঝলাম এসি চলতে শুরু করে দিয়েছে। বিশাল বড় স্যূইট এটা। আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি ছোট ড্রয়িং রমে। এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি সামনের বিশাল বড় বেডরুম আর তার পাশের কিচেনটাকে। এখানেই কোথাও একটা কিছুদিন আগে সীমার সাথে ওর ক্লায়েন্টের হাতা হাতি হয়েছিল। পাদুটো নিজের অজান্তেই কেমন যেন টলে উঠল। ছেলেটা পিছন থেকেই খুব ভদ্র ভাবে আমাকে হাত বাড়িয়ে ইশারা করল মাস্টার বেডরুমের দিকে এগিয়ে যেতে। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে চললাম। বেডরুমের দরজা দিয়ে ঢুকে একটু এগোতেই হঠাৎ চমকে সম্বিত ফিরে পেলাম। আচমকা দেখলাম তিনটে একুশ বাইশ বছরের ছেলে যেন মাটি ফুঁড়ে লাফিয়ে বেড়িয়ে এসে দাঁড়ালো আমার সামনে। প্রত্যেকের মুখে একটা খুনে হিংস্র হাঁসি। যে আমাকে নিয়ে এসেছে সে এখনও আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। চারটে গলার সমবেত কান ফাটানো ভয়ানক কোরাস শুনে আরও থতমত খেয়ে গেলাম। “সারপ্রাইজ” বলে ওরা একসাথে চেঁচিয়ে উঠেছে।
কিছু বুঝে উঠবার আগেই কয়েক মুহূর্তে পরপর অনেক কিছু হয়ে গেলো। পিছন থেকে প্রচণ্ড সশব্দ ধাক্কা অনুভব করলাম। সামনে দিকে পড়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো ছেলে আমার হাত দুটো শক্ত ভাবে চেপে ধরে আমার পড়ন্ত শরীরটাকে বাঁচিয়ে নিল। শরীরটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় আমার হাঁটু দুটো গিয়ে মাটি স্পর্শ করতে বাধ্য হয়েছে। দুজন মিলে আমার নরম দুটো হাত ধরে টানতে টানতে ওই হাঁটুর ওপর ভর করে থাকা অবস্থাতেই আমাকে নিয়ে চলল বিছানার দিকে। আমার হাঁটুদুটো দামী কার্পেটে ঢাকা মেঝের ওপর দিয়ে খস খস শব্দে ঘষতে ঘষতে এগিয়ে চলেছে ওদের সাথে সাথে। বিছানার শেষ প্রান্তে নিয়ে এসে দুহাতে হ্যাঁচকা টান মেরে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিল ওরা। হাত দুটো আলগা হওয়ার সাথে সাথে আমার পিছন থেকে বেজে উঠলো উদ্যাম হিন্দি গানের রিমিক্সের সুর। পেছনে ফিরতে দেখলাম বাকি দুজন আমার শরীর ঘেঁষে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদের একটু ঠেলা মেরে পেছনে সরানোর জন্য হাত দুটো তুলতে যাবো, কিন্তু পারলাম না। যে দুটো ছেলে আমাকে টানতে টানতে বিছানা অব্দি নিয়ে এসেছিল তারা সাথে সাথে পিছন থেকে গায়ের জোড়ে আমার হাত দুটো চেপে ধরল। সামনের ছেলেদুটো আমি কিছু বুঝে ওঠবার আগেই আমার পাদুটো চেপে ধরল গোড়ালির কাছে। লাথি মেরে ওদের হাত থেকে পাদুটোকে ছাড়িয়ে নেবার প্রয়াস করলাম কিন্তু পারলাম না, ওদের গায়ের জোর আমার থেকে অনেক বেশী। ওরা আমার পা দুটোকে অনায়াসে মেঝের ওপর থেকে শূন্যে উঠিয়ে নিল, মেঝের থেকে অনেক উপরে উঠে গেল আমার সমস্ত শরীর। শূন্যে ভাসমান শরীরটাকে ওরা নিয়ে চলল বিছানার দিকে। সশব্দে আমাকে বিছানার ওপর চিত করে ফেলেই আমার হাত আর পা জোড়াকে চেপে ধরল বিছানার সাথে। যাদের দুজনে আমার হাত ধরে রেখেছিল তাদের একজন ছেড়ে দিল আমার একটা হাত, কিন্তু সাথে সাথে অন্যজন আরেক হাত দিয়ে আসুরিক শক্তিতে আমার হাতটা আবার বিছানার সাথে চেপে ধরে আমাকে স্থির করে দিল। অন্য জন উঠে গেল আমার পাশ থেকে। আমি চিৎকার করে চলেছি কিন্তু উদ্যাম মিউজিকের শব্দে সেই চিৎকার হয়ত বাইরে অব্দি পৌঁছাবেই না। যে ছেলেটা উঠে গেছিল সে ফিরে এসে আমার মুখের ওপর একটা সাদা রঙের স্বচ্ছ টেপ মেরে দিয়ে আমার ঠোঁটের চারপাশটা সিল করে দিল, বন্ধ হয়ে গেল আমার চিৎকার। ওর কাঁধে গোল করে ঝুলছে মোটা মোটা সাদা রঙের একগোছা দড়ি। দড়িগুলো কে বিছানায় রেখে তারই থেকে একটা দড়ি তুলে নিয়ে আমার বা হাতের কব্জিটা ভীষণ শক্ত ভাবে বিছানার মাথার দিকের একটা পায়ার সাথে বেঁধে দিল। অকেজো হয়ে গেল আমার বা হাত। দুজন মিলে চেপে ধরে ডান হাতের কব্জিটাকেও আরেক দিকের পায়ার সাথে ভীষণ শক্ত ভাবে বেঁধে দিল। যে ছেলেটা দড়ি নিয়ে এসেছিল সে আমার ডান গালে একটা হালকা করে চড় মেরে নিচে ওর বন্ধুদের সাথে গিয়ে দাঁড়ালো।
তিনজনে মিলে আমার পা দুটোকে বিছানার ওপর চেপে ধরেই নিচের দিকে টানতে টানতে আমার গোড়ালি দুটোকে বিছানার একদম শেষ প্রান্তে নিয়ে গেল। আরেকজন ততক্ষণে আমার শরীরে ওপর দিয়ে হাত নিয়ে গিয়ে অবশিষ্ট দড়ির গোছাটা উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ওর বন্ধুদের পাশে। পা দুটোকে গোড়ালি ধারে শরীরের দুপাশে টানতে টানতে যতটা পারা যায় ফাঁক করে নিল আমার ঊরুসন্ধি। কয়েক নিমেষে আমার পায়ের গোড়ালি দুটো বাঁধা হয়ে গেল বিছানার ওপর প্রান্তের দুটো পায়ার সাথে। আমাকে বাঁধা শেষ হলে চার জন মিলে লোলুপ দৃষ্টিতে একবার অসহায় শরীরটার দিকে তাকিয়ে দেখল। হাত দুটো “V” এর মতন করে মাথার উপর এমন ভাবে টান টান হয়ে রয়েছে যে ইতিমধ্য কাঁধ আর বগলের নিচ দিয়ে অসম্ভব ব্যথা করতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে হাতদুটো কাঁধের জায়গা থেকে ছিঁড়ে চলে যাবে। কোমরের নিচে পাদুটোরও একই হাল। চওড়া ওলটানো “V” এর মতন করে কোমরের থেকে নিচের দিকে নেমে গেছে পা গুলো। যেকোনো মুহূর্তে পা দুটোও শরীরের থেকে ছিঁড়ে বেড়িয়ে যেতে পারে। এমন শক্ত ভাবে গোড়ালি আর কব্জি জোড়া কে বেঁধে রেখেছে যে আমার হাতে আর পায়ে রক্ত চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে। ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে আসছে আমার সারা শরীর। চিৎকার করতে চাইলেও পারছি না কারণ আমার মুখ বাঁধা। চারটা ছেলে উল্লাসে লাফিয়ে উঠে একে ওপরের সাথে হাত মেলালো। যে আমাকে নিয়ে এসেছিল সে বলল “কি রে কি বলেছিলাম যে এমন মাল আনব যে সারা জীবন মনে রাখবি। কেমন মাল এনেছি?” বাকি তিনজন আবার একে ওপরের সাথে হাত মিলিয়ে বলল “জাস্ট ফ্যান্টাস্টিক।“ এদের নাম এইবার আমি জানতে পারলাম। যার ডাকে অতিথি হয়ে আমি এসেছি তার নাম জয়। যারা আমার হাত ধরেছিল তাদের একজনের নাম ভিকি আর অন্য জনের নাম রাকেশ। যে বাকি থাকলো তার নাম করণ। রাকেশ আর করণ দুজনের নামই যেমন অবাঙালিদের মতন তেমনি তাদের বাংলা উচ্চারনও খারাপ। পুরো সময়টা তারা হিন্দি বাংলা মিশিয়েই কথা বলছিল। তবে বাংলা ভাষা বোঝার ব্যাপারে যে স্বচ্ছল সেটা বোঝা যায়। পড়ে অবশ্য জেনেছিলাম জয়ও অবাঙালি সেই হিসাবে। তবে সে কথায় সময়ে আসব।