ঊনিশ
পরের দিন আবার যেই কে সেই। আগের রাতের ঘুমটা হয়েছে ভীষণ তৃপ্তিদায়ক। সকালে উঠে যখন ব্রাশ করতে যাচ্ছি তখন আলির সাথে চোখাচুখি হয়েছে। ওর চোখে যেন আমাদের দুজনের জন্য প্রেম ঝরে পড়ছে। আমরা লাজুক ভাবে চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু অদিতি ব্রাশ মুখেই হঠাত দাঁড়িয়ে ওকে জিজ্ঞেস করল “ অরূপদা আজকে চলে আসছে তো? আজকে কিন্তু আমরা কোনও ডেলিভারি নিতে পারব না। এত যোগ গুন ভাগ করতে আমাদের পেট খারাপ হয়ে যায়। “ আলি হেঁসে বলল “ না রে বাবা। আজ কোনও ডেলিভারি নেই। অরূপদাও পরশু ভোরে ঢুকে যাবে। তোমরাও নিশ্চিন্ত থাকো, তোমাদের দিয়ে আর আমি পাটিগণিত কশাবো না। বাকি রাও তারই আগু পিছু এসে পৌঁছাবে।“ ব্রাশ করে ফিরে এসে চা নিয়ে গিয়ে আমরা বসেছি অরূপদার ঘরে। এখন এখানে কেউ নেই। অদিতি চায়ে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে বলল “ সবই বুঝলাম, শুধু কয়েকটা হিসাব মিলল না। “ বললাম “আমিও অনেক কিছু বুঝেছি। কিন্তু কথাটা যখন তুই তুললি তখন তুইই শুরু কর। “ ও আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল “ আমাদের হাতে এখনও দুদিন আছে। “ অরূপদার টেবিলের ওপরে একবার নজর ঘুরিয়ে নিয়ে বলল “ আজ বাইশ। অরূপদা ফিরছে পরশু। সুতরাং এখনই কাজে লেগে পড়তে হবে। চল গ্লাসটা রেখে খেয়ে দেয়ে আসি। “ মাঝপথে শুধু একবার ও মুখ খুলল “চক্রান্ত, ঘোর চক্রান্ত। এত গুলো মেয়েকে নিয়ে খেলে বেড়াচ্ছে। নানা ভাবে নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে নিজের পকেট গোছাচ্ছে। এস্পার কি অস্পার করতেই হবে। সামান্য খাদ্যের বিনিময়ে ওদের জীবনের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ওদেরকে বসিয়ে রেখেছে নরকে। আর ওই লোকটার জন্য এরাই সামান্য কটা খাদ্যের বিনিময়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে বিপদের মুখে, আর মনে বিশ্বাস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু...। কিন্তু একদিন বোধহয় উঠে দেখবে কেউ নেই। সব শেষ। হয়ত পুলিশ...“ আমরা ঘরে এসে পৌঁছেছি। আজও ও দৌড়াতে যায় নি। এসেই ও শুয়ে পড়ল। আমি ওকে বললাম “গণ্ডগোল যে আছে সে তো বুঝতেই পেরেছি। কিন্তু, আলি দা লোকটা জেনুইন। কি বলিস?” ও শুধু একটা হুমম মতন শব্দ করল। আমি চেয়ারে গিয়ে বসে স্থির দৃষ্টে বাইরের দিকে চেয়ে বসে রইলাম। রাজু প্রায় আধঘণ্টা পরে এসে আমাদের জল খাবার দিয়ে গেল। অদিতি উঠে ওকে গুড মর্নিং জানিয়ে চেয়ারে এসে বসল। একই প্লেটে আমাদের দুজনের জল খাবার দিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে বলল “কি বুঝলি বল?” আমি বললাম “কোথাও থেকে টাকার রেগুলার আমদানির বন্দবস্ত করেছে লোকটা, আর সেটা তো নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়?” ও একটুকরো শুঁকনো রুটি মুখে পুড়ে দিয়ে বলল “ প্রশ্নটা এটা নয় যে অরূপদা সেটা বন্দবস্ত করেছে। প্রশ্ন হল - কিভাবে?” ও নিজেই বলল “ব্ল্যাক মেলিং। সব থেকে সহজ ব্যাখ্যা। এরকম বিনা কারণে বারবার রেগুলার ডিপোসিট মেইনলি একটাই কারণে হয়। আর সেটা হল ও অনেক কে ব্ল্যাক মেইল করছে আর তারাই প্রত্যেক মাসে একই তারিখে একই পরিমাণ টাকা জীবন বিমার মতন ওর অ্যাঁকাউন্টে জমা করে যাচ্ছে। “ একটু ভেবে বলল “আমার অবশ্য অন্য একটা সন্দেহ ছিল। কিন্তু একটু ভাবতেই বুঝতে পেরেছি যে সেই সন্দেহ সম্পূর্ণ নিরর্থক। “ জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম “কি সন্দেহ?” ও বলল “ এমনও হতে পারত যে বাইরে থেকে কোনও একটা সংস্থা ওকে টাকা পাঠিয়ে যাচ্ছে। হয়ত সন্দেহ না হয় এমন ভাবে প্রত্যেক মাসে ভেঙ্গে ভেঙ্গে পাঠায়। আর বিভিন্ন অ্যাঁকাউন্ট থেকে পাঠায়। কিন্তু তাতেও গোলমাল। কেন না, সেই টাকা ক্যাম্পের জন্য এলে সেটা ব্যাঙ্কের ভল্টে পড়ে থাকত না। ওটা ও কোনও না কোনও ভাবে উঠিয়ে নিতই। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা হয় নি। আচ্ছা আরেকটা ব্যাপার, সেটা হল জেগুলোর পর এক একটা বড় অ্যাঁমাউন্ট ঢুকেছে আর তারপর থেকে ওই একই জায়গা থেকে টাকার আমদানি শুরু হয়েছে সেই সব গুলোর আগেই ও মেয়ে পাঠিয়ে লুট করেছে। বেসিকালি বেশ্যার মতন কাউকে না কাউকে পাঠিয়েছে আর তারা শরীর দিয়ে ছেলেদের বশ করেছে, তাদের সাথে শুয়েছে আর তারপর তাদের টাকা লুট করে ফেরার। এখানে একটাই জিনিস খুব সিগ্নিফিক্যান্ট। সেটা হল, লোকগুলো কেন পুলিশের কাছে গেল না। তুই ঠিকই বলেছিলিস কাল। এত টাকা থাকলে তো পুলিশ আর প্রশাসন ওদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু তাও গেল না। কোনও পুলিশি ঝঞ্ঝাটই হল না। আর সব কটা জিনিস ঘটল দুটো হোটেলের একই ঘরে। অবশ্য অন্য কোনও হোটেলেও এরকম সেটিং যে থাকবে না সেটা এখনই বলা যায় না। এবং খুব সম্ভবত সেটা আছেও। কিন্তু সব মিলিয়ে এর অর্থ একটাই হয় সোনা, ওরা পুলিশের কাছে যাবে তার আগেই আমাদের অরূপদা ওখানে গিয়ে ওদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে কিছু একটা ভয় দেখিয়ে। গুলি গোলা ওর আছে। কিন্তু ওই লোকগুলো গোপনেও যেতে পারত পুলিশের কাছে। মোটা টাকার ঘুষ দিতে পারত। কিন্তু তেমন তারা করে নি। উল্টে প্রত্যেক মাসে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ওর চাহিদা মিটিয়ে চলেছে। মানে শুধু ভয় দেখায় নি, ওদের স্বার্থ রক্ষার জন্য মোটা টাকায় দফা রফা করে এসেছে। এবং সে টাকা গুলো ও নিজের নামেই নেবে। এক থোকে একটা বিশাল রকম নিয়ে তাৎক্ষনিক ছেড়ে দিয়েছে আর তার পর থেকে ইন্টারেস্ট নিয়ে চলেছে। “ আমি বললাম “কিন্তু ...” আমি এখনও বুঝতে উঠতে পারছিলাম না যে অরূপদার সংস্থার মেয়েরা গিয়ে লুট করেছে। সেখানে অরূপদা গিয়ে ব্ল্যাক মেইল করবে কি ভাবে। ও উঠে পড়েছিল। বোধহয় আমার মনের কথাটা বুঝে নিয়েই বলল “ পাগলি, একই হোটেল আর একই ঘর এই কথাটাও কম সিগ্নিফিক্যান্ট নয়। আর যারা গিয়েছিল সবাই বেশ্যা সেজে গিয়েছিল। আর যাদের কাছে গিয়েছিল তারা যেই বয়সেরই হোক না কেন, তারা প্রত্যেকে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, অন্তত জানা জানি হলে ওদের ক্ষয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেটা মেনে নেওয়া যায়। ব্ল্যাকমেইলের একটা সহজ কারণ তো এমনিই দেখা যাচ্ছে। “ আমি ওকে না জিজ্ঞেস করে পারলাম না “ কিন্তু কি প্রমাণ আছে তোর হাতে যে তুই এই সিদ্ধান্তে এসেছিস। ”
ও বলল “প্রমান। প্রমান। প্রমান। হয়ত সেটা জোগাড় করাও যাবে। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রশ্ন, ওই রুমের বেয়ারা সেই সেই দিনগুলোতে কে কে ছিল। একই লোক ছিল কি? নাকি অন্য অন্য লোক ছিল। অন্য লোক হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য খুব কম। কারণ, ঘটনা যা শুনেছি তাতে রুমের বেয়ারার সাথে বা ভেতরের কারোর সাথে অরূপদার সেটিং থাকাটা এখানে মাস্ট। এত বড় হোটেলের মালিকের সাথে ও সেটিং করতে পারবে না। ভিন্ন ভিন্ন বেয়ারা হলে এত দিনে নিশ্চিত পুলিশ জানা জানি হয়ে যেত। সোনা জানিসই তো এই সব কথা দু-জন জানলে সেটা পাঁচ কান হতে বেশী সময় লাগে না, এই সব কথা কানে হাঁটে। (ডান হাতের মুঠিটা বা হাতের চেটোয় মেরে বলল) আমি সিওর,এখানে বেয়ারার হেল্প ছাড়া একটা লুন্ঠিত অপমানিত টাকার কুমীরকে ও এত সহজে বশ করতে পারত না কারণ বেয়ারা হয়ত নিজেই হোটেলের আর হোটেলের গেস্টের নিরাপত্তার স্বার্থে ম্যানেজমেন্টকে এই কথাটা তৎক্ষণাৎ জানাত, আর সাথে সাথে হুলস্থুল পড়ে যেত। আমি নিশ্চিত যে লোকগুলো কে স্পটেই বশ করা হয়েছে এবং টাকার ডিল সম্পূর্ণ করা হয়েছে। হোটেলের ম্যানেজমেন্ট এইসব লুটের ব্যাপারে কিসসু জানে না। সেটা ছাড়াও আর একটা জিনিস জানতে হবে। “ আমি মনে মনে ওর বুদ্ধির তারিফ না করে পারলাম না। তবুও না জিজ্ঞেস করে পারলাম না “ আচ্ছা আলিদার হিসাব অনুযায়ী এতগুলো লুট ও নিজে কন্ট্রোল করেছে। কিন্তু টাকার অঙ্কটা, মানে, যেটা ওর ব্যাঙ্কে আছে, সেটা কাল বেশী মনে হলেও আজ কিন্তু লুটের সংখ্যা শুনে কম মনে হচ্ছে। তাই না? মানে, যদি শুধু এই হোটেলগুলোর কথাই ধরি, তাতেও মনে হচ্ছে কম কারণ লুটের সংখ্যা অনেক বেশী। আর তোর কথা মতন যদি অন্য হোটেলেও একই রকম সেটিং থাকে তাহলে তো স্থির বিশ্বাস করতে হবে যে এর থেকে অনেক বেশী টাকা এদের দলপতি অন্য কোথাও সরিয়ে রেখেছে। ” ও সম্মতি সুচক মাথা নাড়িয়ে বলল “সোনা, সেটাই তো তখন বললাম। হাতে দুদিন আছে। লেগে পড়তে হবে। আমি বইটা ফেরত দিতে যাব (এখানে বলে রাখি, ও বইটা খুলেই দেখেনি।) আর তুইও আমার সাথে যাবি। আর কোনও অ্যাঁকাউন্টের পাশ বই পাওয়া যায় কি না সেটা খুঁজে দেখতে হবে। আর দেখতে হবে আজই। ভুলিস না ওর আক্যাউন্টে খুব শিগগির বিরাশি লাখ টাকা পড়বে। চল আর সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। তবে বাকি পাশ বইগুলো যদি নিজের সাথে নিয়ে গিয়ে থাকে তো এত খোঁজাখুঁজি সব জলে যাবে। “ আমি ওকে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু ও আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল “ শোন, দুটো লাইনের মানে এখনও বের হয় নি। আর তাছাড়া তুই কি জিজ্ঞেস করতে পারিস, বা কেন তোর খটকা লাগছে সে গুলো আমি মনে হয় জানি। আমি তোকে সে গুলো সময় নিয়ে বোঝাবো। এখন চল। হাতে অনেক কাজ। “ আমরা রওয়ানা দিলাম। পথে আলিদা আর রাজুর সাথে দেখা হল। আমরা বললাম “লাইব্রেরি থেকে নতুন বইয়ের সন্ধান করতে যাচ্ছি। “ রাজু হেঁসে উঠলো “এখানে সবাই শিক্ষিত কিন্তু তোমাদের মতন বই নিয়ে বসে থাকতে আগে কাউকে দেখিনি। “ আলি বলল “যাও। দেখ কোন বই পছন্দ হয়। ওখানে বসেও পড়তে পারো তোমরা। আর কোনও দরকার পড়লে আমি মাঠেই আছি আজ। সেখানে এসে খোঁজ করবে।“ আমাদের পাশ দিয়ে আরও কয়েকজন মেয়ে যাচ্ছিল ওরা আমাদের কথা শুনতে শুনতে ব্যস্ত ভাবে হেঁটে মাঠের দিকে চলে গেল। সীমাকে দেখলাম আজ অনেক ফ্রেশ লাগছে। ট্রেনিঙে যোগ দিতে এখনও কয়েকদিন দেরী যদিও। সীমাকে দেখে অদিতি আর আমি দুজনেই একসাথে চাপা গলায় এঁকে অপরকে বলে উঠলাম “ এও সেই দিন গ্রিন হোটেলে গিয়েছিল। অবশ্য জানি না আঠারো নম্বর ঘরেই গিয়েছিল কি না।“ আমি ওকে বললাম “তুই ঘরে গিয়ে বই ঘাঁটা শুরু করে দে। আমি সীমার শরীরের খবর জানার ভান করে একথা সেকথায় বের করে নি যে কত নম্বর রুমে ও গিয়েছিল। “ অদিতি আমার হাতটা চেপে ধরে বলল “ পারবি তো পেট থেকে কথা বের করতে? সন্দেহ করবে না তো তোর ওপর?” বললাম “দেখাই যাক না। ড্রেসিংটাও করে আসি। যদিও আজ ড্রেসিং করার দরকার ছিল না। “ সীমাকে দেখার ভান করে ওর সাথে গিয়ে গল্প জুড়ে দিলাম। মেয়েটা খুবই সরল সাদা সিধা। আমাকে খুব একটা খোঁচাতেই হল না। আমি শুধু বললাম “আমি তো শুনেছি গ্রিন হোটেলের আঠারো নম্বর ঘর (ইচ্ছে করে নিজে যেচেই লাকি রুম নম্বরটা বলে দিলাম, দেখি ওর কেমন রিয়েকসন হয়। কোন রুমে গিয়েছিলে জিজ্ঞেস করলে অন্য রকম সন্দেহ উঁকি মারতে পারে ওর মনে। আর অন্য ঘরে গিয়ে থাকলেও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় ও নিজেই হয়ত বলে উঠবে যে না না আঠারো নয় অমুক নম্বর ঘরে গিয়াছিলাম।) অরূপদার জন্য খুবই লাকি। তবুও সেই ঘরেই গিয়ে ওর এক হনুমান কাত হয়ে ফিরে এলো, এ কেমন কথা হল। “ ও বলল “আঠারো নম্বর ঘর সত্যি আমরা লাকি বলে মানি। কিন্তু আমারই ঠিক করে দেখা উচিৎ ছিল যে লোকটা ঘুমিয়েছে না ঘুমায়নি। “ তার মানে ও সেদিন আঠারো নম্বর ঘরেই গিয়েছিল। এর পর ও একটা কথা বলল যেটা শুনে আমার মাথাটা চট করে ঘুরে গেল। ও বলল “ আরে লোকটা যে গাঁট্টাগোঁট্টা আর ঝানু সেটা বলতে অরূপদাও ওখানে এসেছিল। আমাদের কাছে লোকটার মোটামুটি একটা বিবরণ ছিল মাত্র। কিন্তু অরূপদা সব ডিটেল জেনে আমাদের জানাতে এসেছিল। একবার ভেবে দেখো আমাদের কথা কত চিন্তা করে। নিজে গিয়েছিল অন্য একটা কাজে, সেই কাজ সেরে দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে হাজির হয়েছে ওখানে শুধু আমাকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য। আমি আর আলি দা পৌঁছে দেখি গেটের কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে অরূপদা। সব বুঝিয়ে সাবধান করে দিয়েছিল। লোকটার নাকি এরকম কল গার্ল হ্যান্ডেল করার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। এই রকম মেয়েরা যে চুরি করতে পারে সে খবর লোকটা ভালোই রাখে। আমার অরূপদার কথা ক্যাজুয়াল নেওয়া উচিৎ হয় নি। “ মানে সেদিন ঘটনাস্থলে অরূপদাও ছিল। অদিতির স্পটে বশ করার ব্যাপারটা কিন্তু খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। ওর কোমরের কাছে ড্রেসিং শেষ করলাম। ও হাতেও একটা জায়গায় চোট খেয়েছিল, সেটা একবার ঘুরিয়ে দেখে নিলাম। বললাম “রীতিমত দস্যু মেয়ে সব তোমরা। কোমরের আঘাতটা তো বুঝলাম। কিন্তু হাতেরটা কি করে লাগলো সেটা জানা হয় নি। “ ও বলল “ হাতাহাতি হলে এরকম ছোটখাটো আঘাত লেগেই থাকে। কি করে লাগলো সঠিক মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে ধস্তা ধস্তির সময় আমার হাতের বাড়ি খেয়ে ওর বেডরুমের দেওয়াল টিভিটা ভেঙ্গে পড়ে গিয়েছিল। হয়ত তখনই লেগেছে। তবে এসব আঘাত হামেশাই লাগে বলে এসব নিয়ে আমরা ঘাবড়াই না। “ আমি ওর ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ার আগে জিজ্ঞেস করলাম “এত কিছু হওয়ার পর ওখানে নিশ্চই খুব পুলিশি হাঙ্গামা শুরু হবে? ভীষণ হুলস্থূল পড়ে যাওয়ার কথা, তাই না?” সীমা একটু ভেবে বলল “লোকটা বোধহয় এতগুল ব্ল্যাকমানি নিয়ে এসেছে বলেই পুলিশে যাবার রিস্ক নেয় নি (এও ভাবে ব্ল্যাকমানি ইনভলভ হলে এই সব ব্যবসায়ীরা পুলিশের কাছে যেতে ভয় পায়)। আমরা অবশ্য ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশের অপেক্ষা করছিলাম না। তবে ফিরে এসে যা শুনেছি তেমন কিছু একটা পুলিশের গোলমাল হয় নি। আর হয়ে থাকলেও সে নিয়ে কোনও কানা ঘুসো হয় নি। জানি না হয়ত তলে তলে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তবে আমি ভয় পাই না। হয়ত অনেক গুলো থানায় গিয়ে দেখবে আমার বা আমাদের অনেকের নাম ওদের ওয়ান্টেড লিস্টে রয়ছে। অনেক ছবি বা স্কেচও হয়ত পেয়ে যাবে আমাদের। প্রথম প্রথম ভয় লাগতো। কিন্তু এখন গা সয়ে গেছে। একদিন না একদিন তো মরতেই হবে। এই মেয়েগুলোর জন্য আর এদের মতন আরও যারা রয়েছে তাদের জন্য কিছু করে মরতে পারলেই খুশি হব। “